আমাদের দেশের তথা পৃথিবীর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান এবং জনপ্রিয় উৎসব হল দুর্গাপূজা। বছরে দুইবার এই দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকেঃ শরত কালের শারদীয় দুর্গাপূজা এবং বসন্তকালের বাসন্তি দুর্গাপূজা। এর মধ্যে শারদীয় পুজাটি সর্বাধিক জাঁকজমকের সাথে পালন করা হয়ে থাকে।
শারদীয় দুর্গা পুজার মূলত দুর্গতিনাশিনী খ্যাত দেবী দুর্গার আগমন এবং তাঁর হাতে দানব মহিষাসুরের পতনের ঘটনার উপর নির্ভরশীল। কথিত আছে যে অসুরদের অধিপতি মহিষাসুর এক সময় অনেক ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠে। তাকে দমন করতে দেবতাদের সম্মিলিত শক্তি থেকে দুর্গার জন্ম হয়। অতঃপর তিনি মহিষাসুরকে বধের মাধ্যমে আবার শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন।
হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষরা তাই এই সময়কে অত্যন্ত আনন্দঘন একটি উপলক্ষ্য হিসেবে পালন করে থাকে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ এবং ভারত উভয় দেশে অত্যন্ত জাঁকজমকের সাথে পুজা পালন করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের পুজা উদযাপনে জাকজমকের কোন কমতি থাকে না। তবুও বলা চলে হিন্দু প্রধান দেশ হিসেবে ভারতের পুজা গুলো যেন একটু বেশী উদ্দীপনার সাথেই পালন করা হয়ে থাকে। এজন্য প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে প্রচুর হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষ ভারতে বেড়াতে যান পুজা পালনের উদ্দেশ্যে।

প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ভারতে বেড়াতে যাওয়া প্রায় ৩ মিলিয়ন পর্যটকের সিংহ ভাগই যায় বছরের এই সময়টাতে। লক্ষ্য থাকে ভারতের মাটিতে পুজা উদযাপনের এবং ভাল একটা সময় কাটানোর। এজন্য বাঙালি হিন্দূ পর্যটকদের মাঝে কিছু বিশেষ গন্তব্যের বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। গন্তব্যের জনপ্রিয়তা যাচাই করতে গেলে সবার আগে চলে আসবে কলকাতার নাম। এর পর যথাক্রমে মুম্বাই, দিল্লী, গুয়াহাটি, বারনাসি ও পাটনা রয়েছে এই তালিকায়।
কলকাতা
কলকাতার পুজা উদযাপন যেন অন্যদের থেকে একটু আলাদাই হয়ে থাকে। কলকাতার শারদীয় দুর্গাপূজা শুধু একটি ধর্মীয় উৎসবই না, এর থেকেও যেন বেশী কিছু। পুজা চলাকালীন সময়ে এর স্পষ্ট ছোয়া দেখতে পাওয়া যায় কলকাতার ঘরে ঘরে। পুজার সময় কলকাতা তার বর্ণিলতম সাজে সজ্জিত হয়। পুজার সুসজ্জিত প্যান্ডেল, সুন্দর কারুকাযে তৈরী করা প্রতিমার সমারোহ, ধুপের সুগন্ধ, সুস্বাদু সব স্ট্রীট ফুড আর চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জার বদৌলতে এই পাঁচ দিনের জন্য কলকাতা হয়ে ওঠে কলরব ও আনন্দমুখর জনস্রোতের নগরী।

এখানে রয়েছে বহু সংখ্যক মণ্ডপ। প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বাগবাজার মন্ডপ থেকে শুরু করে হালের কলেজ স্কয়ার মন্ডপ – দর্শনার্থীদের অবস্থা দাড়ায় কোনটা রেখে কোনটা দেখব! এছাড়া বিশিষ্ট বনেদি পুজা তো রয়েছেই। বনেদি পুজা আয়োজনে শোভা বাজার রাজবাড়ি ও রানী রাসমণি বাড়ির সুখ্যাতি রয়েছে সেই আদি আমল থেকে। এসব আকর্ষণীয় মণ্ডপ দেখার পাশাপাশি উপভোগ করতে পারবেন নানারকম সুস্বাদু ও উপাদেয় ভোগ। এছাড়া সব শেষ আকর্ষণ হিসেবে দেবীর জাঁকজমকপূর্ণ বিসর্জনও দেখতে পাবেন। কলকাতার পুজা উদযাপন এতই বর্ণাঢ্য যে এই বছর (২০১৯) এই উৎসবকে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজে অন্তর্ভুক্তির জন্য নমিনেশন দেয়া হয়েছে।
কলকাতা ভ্রমণ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে পড়ে নিতে পারেনঃ ঘুরে আসুন আনন্দ নগরী খ্যাত কলকাতা
মুম্বাই
ভারতের অন্যতম প্রধান শহর হবার সুবাদে মুম্বাইয়ের দুর্গাপূজাও অনেক জাঁকজমক পূর্ণ হয়ে থাকে। এখানকার মণ্ডপগুলোর আলোকসজ্জা দেখে আপনি মুগ্ধ হতে বাধ্য হবেন। এখানকার প্রখ্যাত প্যান্ডেল গুলোর মধ্যে আছে শিবাজী পার্ক, পোওাই, লোখান্ডওয়ালা আর চেম্বুর।

মুম্বাইকে বলা হয়ে থাকে বলিউড তারকাদের বাড়ী। তাই অনেক পুজা মণ্ডপেই দেখতে পাবেন তারকাদের মেলা। বিশেষ করে বিখ্যাত মুখার্জী পরিবার দ্বারা পরিচালিত বলকানজী বাড়ি মণ্ডপে অনেক তারকারা তাদের পরিবার সহ মণ্ডপ পরিদর্শনে যান। কপাল ভাল হলে রণবীর কাপুর, প্রিয়াংকা চোপড়াদের সাথে দেখাও হয়ে যেতে পারে। মণ্ডপ গুলোর পাশাপাশি মুম্বাইয়ের জনপ্রিয় স্থাপনাগুলো যেমন গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়া, জুহু সৈকত, সঞ্জয় গান্ধী ন্যাশনাল পার্ক, কোলাবা মার্কেট, ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ স্টেশন ইত্যাদি জায়গাগুলোও ঘুরে বেড়াতে পারবেন।
মুম্বাইয়ের সেরা দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে জানতে পড়ুনঃ মুম্বাইয়ের দেখার মত সেরা স্থানগুলো
দিল্লী
সমগ্র ভারতে যখন এত জাঁকজমকের সাথে পুজা উদযাপিত হয় তখন খোদ রাজধানীতে যে চাকচিক্যের কোন কমতি থাকবে না, সেটা বলাই বাহুল্য। বিভিন্ন মণ্ডপে মনকাড়া সাজ সজ্জার পাশাপাশি পাবেন মন্মুগ্ধকর সঙ্গিতের আয়োজন। এখানকার প্রায় সব মণ্ডপই এরকম বর্ণাঢ্য। তবে বিশেষ কিছু মণ্ডপের নাম নিতে হলে প্রথমেই আসবে সফদারজং এনক্লেভ মণ্ডপ, ঐতিহ্যবাহী মিন্টো রোড মণ্ডপ, কাস্মিরী গেট মণ্ডপ, তীমারপুর ও সিভিল লাইন মণ্ডপ। এখানে অনেক মণ্ডপেই দর্শনার্থীদের আনন্দ দেবার জন্য গান বাজনা ও পুতুল নাচের আয়োজন করা হয়।

এখানে ছবি তোলার মত অসংখ্য উপকরণ ও উপলক্ষ্য পেয়ে যাবেন, তাই ক্যামেরা সাথে রাখতে ভোলা যাবে না। দিল্লীতে গেলে এই সব মণ্ডপের পাশাপাশি দেখে আসতে পারবেন বিখ্যাত রেড ফোর্ট, লোধি গার্ডেনস, ইন্ডিয়া হ্যাবিট্যাট সেন্টার, হাউজ খাস কমপ্লেক্স, নিম্রানা ফোর্ট প্যালেস, ওখলা বার্ড স্যাঙ্কচূয়ারী, গার্ডেন অফ ফাইভ সেন্স, টিভোলী গার্ডেন রিসোর্ট ইত্যাদি।
দিল্লী ভ্রমণ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে পড়ে নিতে পারেনঃ দিল্লিতে দেখার মত সেরা কিছু স্থান
গুয়াহাটি
গুয়াহাটির মানুষজন বেশ ধর্মপ্রাণ। তাই তারা বেশ ভক্তি সহকারে দেবীকে স্বাগতম জানিয়ে থাকে। সারা শহর জুরে তখন থাকে দর্শনীয় সব মণ্ডপ। বাতাসে নানা ধরনের খাবারের সুগন্ধি ভেসে থাকে। গুয়াহাটিতে বাঙালি খাবারের বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। এখানকার বিখ্যাত মণ্ডপগুলোর মধ্যে আছে বিষ্ণুপুর সার্বজনীন মণ্ডপ , আট-গাঁও মণ্ডপ, গীতানগর মণ্ডপ ইত্যাদি। ২০১৭ সালে বিষ্ণুপুর সার্বজনীন মণ্ডপে ১০০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট প্রতিমা তৈরী করা হয় যা অতীত কালের সব রেকর্ড ভেঙ্গে এখন পর্যন্ত সর্বচ্চ প্রতিমা।

বেনারস
গঙ্গার তীরবর্তী এই শহরকে বলা হয়ে থাকে পবিত্র শহর। বেনারসকে বলা হয় ভারতের ধর্মীয় রাজধানী। পুজা ছাড়া এমনি সাধারন সময়েও এর গুরুত্ব অনেক বেশী। পুজার সময়ে এই শহর আরও বর্ণিল সাজে সজ্জিত হয়। বলাই বাহুল্য এখানে দেবীকে বিশেষ ভাবেই স্বাগত জানানো হয়।

পুজার সময় বেনারসে থাকলে আপনি জৈতপুরের ভাগেশ্বরী দেবী দুর্গা পুজা সমিতির লক্ষ লক্ষ ভক্তদের সঙ্গি হতে পারবেন। এখাকার আয়োজকরা এই বিশাল সংখ্যক মানুষের কথা ভেবে পুজার আয়োজনটাও সেই রকম বড় আকারেই করে থাকেন। এখানে দেখার মত আরও আছে বাবা মৎস্যন্দ্রনাথ দুর্গোৎসব সমিতি প্যান্ডেল। এছাড়া ভেল্পুর প্যান্ডেলের দৈনন্দিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদি তো আছেই!

ভারতের ভিসা কিভাবে করবেন জানতে হলে পড়ুনঃ দালালের খপ্পড়ে না পড়ে নিজেই করুন নিজের ভিসা
পাটনা
পাটনা বাসিরাও তাদের নিজস্ব স্টাইলে দেবী দুর্গা কে স্বাগত জানিয়ে থাকে। পাটনার পুজা গুলার প্রধান বৈশিস্ট হল এদের মনকাড়া প্রতিমাগুলো। পাটনার মূর্তি গড়ার কারিগদের সমগ্র ভারতের মধ্যে বেশ সুখ্যাতি রয়েছে। কারিগরদের বদৌলতে পাটনার মণ্ডপ গুলোতে থাকে দারুন সব নজর কাড়া সাজ সজ্জা। এই ডিজাইনগুলো করা হয়ে থাকে ভারতের বিভিন্ন বিখ্যাত মন্দিরগুলোর আদলে।

এখানে দেখার মত বিশেষ যে মণ্ডপগুলো আছে সেগুলো হল কুরজি মোড়, রুকুন পাড়া, বোরিং রোড, ডাক বাংলো ও স্টেশন রোড মণ্ডপ। এসব মণ্ডপ গুলোর নজরকাড়া সাজসজ্জার পাশাপাশি বিখ্যাত ধুঞ্চি নাচ উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়া অত্যন্ত সুস্বাদু স্ট্রিট ফুডের বিশাল সমারোহ পাবেন রাস্তার আশে পাশেই।
পুজা উদযাপনটা একটু বেশী স্মরণীয় করতে চাইলে এই সময় ভারত ভ্রমন একটা ভাল সিদ্ধান্ত হতে পারে। পুজার বর্ণিলতা উপভোগ করার পাশাপাশি নতুন একটা দেশ দেখা, নতুন কিছু অভিজ্ঞতা নেয়া, শপিং করা ইত্যাদি চমৎকার অভিজ্ঞতাও নিতে পারবেন।
ভারতের যেকোন গন্তব্যের বিমান টিকিট সাশ্রয়ী মুল্যে আপনার হাতে পৌঁছে দিবে ফ্লাইট এক্সপার্ট। আমাদের ইনভেন্ট্রীতে রয়েছে ভারতের নামকরা সব বিমান সংস্থা যেমন ইন্ডিগো, স্পাইস জেট, জেট এয়ারয়েজ এবং এয়ার ইন্ডিয়া। এসব বাজেট এয়ারলাইন্সে ভ্রমন করলে আপনার খরচ অনেকটাই কমে আসবে। আর সেই সাথে ফ্লাইট এক্সপার্টের বেস্ট প্রাইস গ্যারান্টি তো থাকছেই! বিমান টিকিট ব্যুকিং সহ যেকোন তথ্যের জন্য ভিজিট করুন www.flightexpert.com অথবা কল করুন +88-09617-111-888।
আরও পড়ে নিতে পারেনঃ
বিমান ভ্রমণ করতে কি কি কাগজ পত্র লাগবে
ইন্ডিগো এয়ারলাইন্স – ভ্রমণ করুন সবচাইতে সাশ্রয়ী এয়ারলাইন্সে
ভারতে চিকিৎসা – সেরা হাসপাতালগুলো কোথায়