ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাশাপাশি সিলেট বাংলাদেশের প্রধান একটি শহর। সিলেট বিভাগের প্রধান এবং বিভাগীয় শহর হবার পাশাপাশি এর আরও অনেক গুরুত্ব রয়েছে। সুরমা নদীর তীরবর্তী এই শহরকে বাংলাদেশের আধ্যাত্মিক রাজধানীও বলা হয়ে থাকে। অর্থনৈতিকভাবে সিলেটের অবস্থান অনেক শক্তিশালী। শুধু বাংলাদেশই না, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সিলেট অন্যতম সম্পদশালী একটি জেলা।
সিলেটের অনেক লোক দেশের বাইরে অবস্থান করে। এর বড় একটা অংশ ইংল্যান্ডে আছে। ইংল্যান্ডের বাংলাদেশী কম্যুনিটির শতকরা ৯৫ ভাগ লোকই সিলেটবাসী। এরা প্রতিবছর বিশাল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা দেশে প্রেরন করে থাকেন। এক হিসেবে দেখা যায় যে শুধুমাত্র প্রবাসি সিলেটবাসীদের কাছ থেকে বাংলাদেশ সরকার প্রতি বছর ১০ বিলয়ন ডলারের বেশী বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকেন।

পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও সিলেটের গুরুত্ব অনেক বেশী। সিলেটে অনেক পবিত্রও মাজার রয়েছে যেগুলো দেখতে দেশ এবং বিদেশ থেকে অনেক মুসলমানরা আসেন। এর মধ্যে আছে হযরত শাহ জালালের দরগাহ, শাহ পরাণের মাজার, গাজী বুরহান উদ্দীনের মাজার ও অন্যান্য।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক থেকেও সিলেট কোন অংশে পিছিয়ে নেই। এখানে আছে জৈন্তিয়া পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্য, সৌন্দর্যমণ্ডিত জাফলং, বিছানাকান্দির স্বচ্ছ জলরাশি, রাতারগুল, সজিবতায় ভরা চা বাগান এবং আরও অনেক কিছু যা প্রচু্র পর্যটকদের আকর্ষণ করে। একারণে ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকার লোকজন সিলেট ভ্রমণ করে থাকেন। অনেক বিদেশী পর্যটকদেরও দেখা মেলে।

ঢাকা সিলেট রুটের দূরত্ব এবং সময়
এখন আমরা আপনাদের ঢাকা টু সিলেট রুটের ব্যাপারে কিছু তথ্য দেব। ঢাকা থেকে সিলেট যাবার প্রধান তিনটি উপায় হল সড়ক পথ, রেলপথ এবং আকাশপথ। এই তিনটি উপায় আপনাকে তিন ধরনের সুবিধা দিবে।
সড়ক পথ
ঢাকা থেকে সাধারণত দুই ভাবে সিলেট যাওয়া যায়ঃ সড়ক পথ এবং রেলপথ। সড়ক পথে ঢাকা থেকে সিলেট এর দূরত্ব প্রায় ২৩৯ কিলোমিটার। এই পথ অতিক্রম করতে গড়ে ৮-৯ ঘণ্টা লেগে যায়। আর ঈদ, পুজা সহ বিভিন্ন ট্রাফিক জ্যাম থাকলে সেক্ষেত্রে আরও বেশী সময় লেগে যায়। প্রায় সব বড় পরিবহন সংস্থাই ঢাকা সিলেট রুটে বাস সার্ভিস দিয়ে থাকেন। ভ্রমণের ক্ষেত্রে খরচ কমাতে যারা চান তাদের জন্য বাস উত্তম।
ঢাকা সিলেট রুটের দূরত্ব এবং সময় – রেলপথ
ঢাকা সিলেট রুটে ট্রেন সার্ভিসটা বেশ ভাল। সুরমা, উপবন, পারাবত ও জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস নামের চারটি ট্রেন আছে যারা নিয়মিত ঢাকা সিলেট রুটে চলাচল করে থাকে। ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ে। এর পর শ্রীমঙ্গল হয়ে সিলেট পৌছায়। এক্ষেত্রে ৭ ঘণ্টা থেকে ৮ ঘণ্টার মত সময় লেগে যায়। খরচও বেশী হবে না।

ঢাকা সিলেট দূরত্ব এবং সময় – আকাশপথ
তবে দ্রুত গতিতে সকল ঝামেলা এড়িয়ে যারা সিলেট পৌছাতে চান, তাঁদের জন্য আদর্শ হবে আকাশপথ। মাত্র ৪৫ মিনিট থেকে ৫০ মিনিটের মত সংক্ষিপ্ত সময়ে আপনি পৌঁছে যাবেন ঢাকা থেকে সিলেট। নির্দ্বিধায় এটাই ঢাকা সিলেট রুটের দ্রুততম ভ্রমনপথ। বিমানগুলো ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে এবং ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতরণ করে।আগে ফ্লাইট সংখ্যা কম থাকলেও এখন তা বেড়েছে। তাই সপ্তাহের সব দিনই এখন ঢাকা সিলেট ফ্লাইট পাওয়া যাচ্ছে। এখানে খরচ কিছুটা বাড়লেও কম সময়ের দিক থেকে বিবেচনা করলে ঢাকা থেকে সিলেট যাবার সবচাইতে ভাল উপায় হল আকাশপথ।
ঢাকা সিলেট ভ্রমণ – কোন বিমানে যাবেন
ঢাকা সিলেট রুটে একাধিক এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। আভ্যান্তরিন ফ্লাইট পরিচালনার অংশ হিসেবে যে সব এয়ারলাইন্স ঢাকা সিলেট রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে তারা হলঃ
- বাংলাদেশ বিমান
- নভোএয়ার
- ইউ এস বাংলা এয়ারলাইন্স
সপ্তাহে প্রায় ৩০ টিরও বেশী ফ্লাইট ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। সপ্তাহের কোন দিনে কয়টি ঢাকা সিলেট ফ্লাইট পরিচালিত হয় এ সম্পর্কিত একটি চার্ট নীচে দিয়ে দিলাম আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে।
বার | এয়ারলাইন্স ও দৈনিক ঢাকা সিলেট ফ্লাইট হিসাব |
---|---|
শনিবার | ১। বিমান বাংলাদেশ (৪ টি ফ্লাইট) ২। নভোএয়ার (১ টি ফ্লাইট) ৩। ইউ এস বাংলা (১ টি ফ্লাইট) |
রবিবার | ১। বিমান বাংলাদেশ ( ১ টি ফ্লাইট) ২। নভোএয়ার (১ টি ফ্লাইট) ৩। ইউ এস বাংলা (১ টি ফ্লাইট) |
সোমবার | ১। বিমান বাংলাদেশ (২ টি ফ্লাইট) ২। নভোএয়ার (১ টি ফ্লাইট) ৩। ইউ এস বাংলা (১ টি ফ্লাইট) |
মঙ্গলবার | ১। বিমান বাংলাদেশ (১ টি ফ্লাইট) ২। নভোএয়ার (১ টি ফ্লাইট) ৩। ইউ এস বাংলা (১ টি ফ্লাইট) |
বুধবার | ১। বিমান বাংলাদেশ (৪ টি ফ্লাইট) ২। নভোএয়ার (১ টি ফ্লাইট) ৩। ইউ এস বাংলা (১ টি ফ্লাইট) |
বৃহস্পতিবার | ১। বিমান বাংলাদেশ (১ টি ফ্লাইট) ২। নভোএয়ার (১ টি ফ্লাইট) ৩। ইউ এস বাংলা (১ টি ফ্লাইট) |
শুক্রবার | ১। বিমান বাংলাদেশ (৫ টি ফ্লাইট) ২। নভোএয়ার (১ টি ফ্লাইট) ৩। ইউ এস বাংলা (১ টি ফ্লাইট) |
এখানে বিশেষ ভাবে বলে রাখা প্রয়োজন যে অন্য যেকোন ফ্লাইটের মত ঢাকা সিলেট ফ্লাইটও পরিবর্তনশীল। আবহাওয়া বা অন্য যেকোন কারণে ফ্লাইট সংখ্যা পরিবর্তিত হলে সেটা সম্পূর্ণ ভাবে বিমান সংস্থার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হবে।

ঢাকা সিলেট বিমান ভাড়া তালিকা
বিমান ভাড়া সম্পর্কে মানুষের মনে এখনো বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তি আছে। অনেকেই মনে করে যে বিমান ভাড়া অনেক বেশী এবং তা সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে থাকে না। ব্যাপারটা কিন্তু মোটেই সঠিক না। এখন অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বিমান সংস্থার সংখ্যা যেমন বেড়েছে, বিমান ভাড়াও তেমন অনেকটাই কমে এসেছে। এতে যাত্রীরা বিমান ভ্রমণে আরও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।
আমাদের আধুনিক জীবন অনেক দ্রুত। এখন সচেতন মানুষ অন্য যেকোন কিছুর চাইতে সময়কে বেশী মূল্য দিয়ে থাকে। যেকোন উপায়ে তারা চায় সময় বাচাতে। এজন্য আকাশপথে ভ্রমণই সবচাইতে ভাল উপায়। এছাড়া ফ্লাইট এক্সপার্টের মত অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি বিভিন্ন সময় আরও বাড়তি ডিসকাউন্টও দিচ্ছে। ফলে তুলনামুলক ভাবে কমে আসছে ভ্রমণ খরচ।

বিমান ভাড়া সর্বদাই পরিবর্তনশীল। ভ্রমণের তারিখ অনুযায়ী ভাড়া পরিবর্তিত হতে পারে। সেক্ষেত্রে ভাড়া কিছুটা কমে যায় অথবা বেড়ে যায়। তবে পার্থক্যটা সাধারণত খুব বেশী হয় না।
তারপরও আমরা চেষ্টা করেছি যে ঢাকা সিলেট বিমান ভাড়া সম্পর্কে আপনারা যেন একটা ধারণা পান। এই তথ্যগুলো সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থার ওয়েবসাইট থেকে নেয়া হয়েছে।
বিভিন্ন বিমান সংস্থার বিভিন্ন রকম বিমান ভাড়া আছে। সংস্থাগুলো যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ক্লাস বা শ্রেণি বিন্যাস করে থাকে। ক্লাস ভেদে ভাড়া বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। এখানে আমরা চেষ্টা করেছি প্রতিটি বিমান সংস্থার সর্বচ্চ এবং সর্বনিম্ন ভাড়ার তালিকা** তৈরি করতে।
ঢাকা সিলেট বিমান ভাড়ার তালিকা
বিমান সংস্থা | সরবনিম্ন জনপ্রতি ভাড়া | সর্বোচ্চ জনপ্রতি ভাড়া |
---|---|---|
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স | ৩,০০০ টাকা (সুপার সেভার) | ৭,০০০ (ইকোনমি ফ্লেক্সিবল) |
নভোএয়ার | ২,৭০০ – ২,৯৯৯ টাকা (স্পেশাল প্রোমো প্যাকেজ) | ৬,৬০০ ( ফ্লেক্সিবল) |
ইউ এস বাংলা এয়ারলাইন্স | ২,৬৯৯ – ২,৯৯৯ টাকা (প্রমোশনাল ইকনমি) | ৬,০০০ (রেগুলার ইকনমি) |
** তালিকাটি পরিবর্তিত হতে পারে এবং এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। আমরা তালিকাটি তৈরি করেছি ঢাকা সিলেট রুটের বিমান ভাড়া সম্পর্কে আমাদের পাঠকদের একটি সম্যক ধারানা দেবার জন্য।
কিভাবে ঢাকা সিলেট বিমান টিকিট করবেন
আভ্যান্তরিন বিমান ভ্রমণের জন্য পাসপোর্টের প্রয়োজন হবে না। তাই বিমান ভ্রমণের আলাদা কোন ঝামেলা নেই বললেই চলে। নিরাপত্তার খাতিরে শুধু আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রটি হলেই চলবে।
আপনার পছন্দের বিমান অফিস থেকে টিকিট করে নিতে পারবেন। ওয়েবসাইটগুলো থেকেও টিকিট করতে পারেন। যারা ডিসকাউন্ট পছন্দ করেন, তারা ট্রাভেল এজেন্সি থেকে টিকিট নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে কিছু ডিসকাউন্টও পেয়ে যেতে পারেন। বাংলাদেশের অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি গুলোর মধ্যে ফ্লাইট এক্সপার্ট বেশ স্বনামধন্য। এখান থেকে যেকোন বিমানের টিকিট করে নিতে পারবেন ঘরে বসেই।
এদের ওয়েবসাইট ঠিকানাঃ https://www.flightexpert.com/
এছাড়া এরা ভ্রমণ সম্পর্কিত যেকোন প্রশ্নের জন্যও তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন এই নম্বরেঃ ০৯৬১৭-১১১-৮৮৮
লাগেজ সংক্রান্ত তথ্য
নিয়ম অনুযায়ী ইকোনমি যাত্রীরা প্রত্যেকে ২০ কেজি পরিমান চেক কৃত মালামাল বহন করতে পারবেন। তাছাড়া কেবিন লাগেজ হিসেবে ৭ কেজি মাল বহন করা যাবে। বিজনেস ক্লাসের যাত্রীরা ৩০ কেজি চেক কৃত মালামাল এবং ৭ কেজি কেবিন লাগেজ বহন করতে পারবেন। এর চাইতে বেশী লাগেজ পরিবহন করতে চাইলে অতিরিক্ত ফি দিতে হবে। এই ফি সম্পর্কে জানার জন্যে আপনার নির্দিষ্ট এয়ারলাইন্সের সাথে যোগাযোগ করুন। বিমানে মালামাল পরিবহনের সিমাবদ্ধতা ও নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে আরও তথ্য পেতে চাইলে আমাদের এই ব্লগ পোস্টটি পড়ে দেখতে পারেনঃ https://www.flightexpert.com/blog/baggage-rules-for-air-travelers
পরিশেষে আপনার নিরাপদ সিলেট ভ্রমণ কামনা করছি। আপনার কোন সমস্যা বা জিজ্ঞাস্য থাকলে আমাদের ব্লগে অথবা ফেসবুক পোস্টে কমেন্ট করতে পারেন। আমরা যথাসাধ্য সাহায্য করবো উত্তর দিয়ে সহযোগিতা করার।