চীনের বড় এবং বিখ্যাত শহর বলতে সাংহাই ও বেইজিং এর পরেই চলে আসে গুয়াংজু এর নাম। এর আরেকটি নাম ক্যান্টন। গুয়াংজু হল গুয়াংডং এর প্রধান শহর এবং রাজধানী। শিল্পোন্নত হলেও এই শহরে সবুজের কোন অভাব নাই। এজন্যে একে গ্রিন সিটি বলা হয়ে থাকে। এশিয়ার আরেক আকর্ষণ হংকং থেকে মাত্র ১২০ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে আর ম্যাকাও প্রদেশ থেকে ১৪৫ কিলোমিটার উত্তরে গুয়াংজু এর অবস্থান। গুয়াংজুর রয়েছে ২২০০ বছরেরও বেশী পুরনো ঐতিহ্য। প্রাচিনকাল থেকেই গুয়াংজু অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি শহর। প্রাচীনকালে পশ্চিমাদের সাথে যোগাযোগের জন্য যে সিল্ক রোড তৈরি করা হয়েছিল তাঁর একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে ছিল গুয়াংজু। পার্ল নদীর বয়ে চলেছে গুয়াংজু এর ভিতর দিয়ে। একারণে যোগাযোগ ব্যাবস্থাও যথেষ্ট ভাল। গুয়াংজু এখন চীনের অন্যতম ব্যাবসা কেন্দ্র, বন্দর এবং চীনের বৃহত্তম তিনটি শহরের মধ্যে একটি।

প্রায় ১৪ মিলিয়ন জন সংখ্যা এবং ৭,৪৩৪ বর্গকিমিঃ আয়তন নিয়ে গড়ে উঠা গুয়াংজু পৃথিবীর অন্যতম আলফা গ্লোবাল সিটি। প্রতিনিয়ত এখানে আরও মানুষ আসছে। চীনের অন্যান্য প্রদেশ থেকে এবং দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্নও দেশ থেকে গুয়াংজুতে প্রচুর মানুষ আসে। তারপরও শহরের অবস্থা অনেক গোছালো। ট্রাফিক জ্যাম নেই বললেই চলে। এখানকার অধিবাসীরাও খুব সভ্য এবং আইনের প্রতি অনেক শ্রদ্ধাশীল।
প্রধানত ব্যাবসায়িক কারণে পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে অনেক মানুষ গুয়াংজু তে আসা যাওয়া করে থাকেন। বাংলাদেশও তাঁর ব্যাতিক্রম না। সম্প্রতি চীনের সাথে বাংলাদেশের ব্যাবসায়িক সম্পর্কের উন্নতি হবার কারণে ব্যাবসার পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে। এজন্য অনেক বাংলাদেশী গুয়াংজু যাচ্ছেন। এছাড়া গুয়াংজু বিশ্ববিদ্যালয় সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনেক বাংলাদেশী ছাত্র ছাত্রী পড়াশোনা করে থাকেন।
গুয়াংজু সম্পর্কে কিছু চমপ্রদ তথ্য
- এটি চীনের তৃতীয় বৃহত্তম শহর। বেইজিং আর সাংহাই এর পরেই এর অবস্থান। তবে জনসংখ্যা বিবেচনায় এটি চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর।
- এই শহরের পুরনো নাম ক্যান্টন।
- চীনের সবচাইতে প্রাচীন মসজিদ এই শহরে অবস্থিত। মসজিদটি তৈরি করেন হযরত মুহম্মদ (সাঃ) এর চাচা আবু ওয়াক্কাস যিনি ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে ইসলাম প্রচারের জন্যে চীনে আসেন। মসজিদটি হুয়াইশেং মসজিদ নামে পরিচিত।

- চীনের ইতিহাসে গুয়াংজুকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। এর আগে মোট ৩ বার গুয়াংজুকে চীনের রাজধানীও করা হয়েছিল।
- গুয়াংজুকে সিটি অফ ফ্লাওয়ার বা ফুলের শহর নামে ডাকা হয়।
- এখানে বেশ কিছু উঁচু ভবন বা স্কাইস্ক্র্যাপার আছে। এর মধ্যে ক্যান্টন টাওয়ার অন্যতম যা চীন তথা এশিয়ার মধ্যে সর্বচ্চ ভবন। আরও আছে সি টি এফ টাওয়ার যা পৃথিবীর মধ্যে ৭ম উঁচু ভবন।

- ১৬তম এশিয়ান গেমস গুয়াংজুতে অনুষ্ঠিত হয়। এতে সব মিলে ৯,৭০৪ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহন করে যা সর্বচ্চ সংখ্যক প্রতিযোগীর রেকর্ড সৃষ্টি করে।
- গুয়াংজু থেকে খুব সহজেই হংকং এর ফ্লাইট পাওয়া যায়। হংকং এর সাথে যোগাযোগের জন্য একটি বিশেষ বিমানবন্দরই রয়েছে এখানে।
- গুয়াংজুতে পাবেন চীনের বিখ্যাত কান্টোনিজ খাবার। চীনের কুজিন গুলোর মধ্যে কান্টোনিজ কুজিন অনেক সুস্বাদু ও বৈচিত্র্যময়। জনপ্রিয়তার দিক থেকে এই কুজিন অষ্টম অবস্থানে আছে।

কখন বেড়াতে যাবেন গুয়াংজু
অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর, এই সময়টাই সবচাইতে ভাল গুয়াংজুতে বেরাবার জন্যে। এইসময় হালকা শীত শীত ভাব থাকে। এমনিতে গুয়াংজুর আবহাওয়া অনেক আরামদায়ক ও নাতিশীতোষ্ণ। এপ্রিল মাসে সেখানে বর্ষাকাল এবং বেশ ভাল পরিমানে বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। যারা বৃষ্টি এড়াতে চান তাদের জন্য এপ্রিল –জুন মাস এড়িয়ে চলাই ভাল।
ঢাকা থেকে গুয়াংজু কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে গুয়াংজুর দূরত্ব ২,৩০০ কিলোমিটারের কিছু বেশী। তাই স্বাভাবিকভাবেই আকাশপথে যাওয়া সব চাইতে সহজ এবং এতে সময়ও অনেক কম লাগে। ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করলে ৩ ঘণ্টা ৪০ মিনিট থেকে সর্বচ্চ ৪ ঘণ্টার মধ্যে গুয়াংজু পৌঁছে যাবেন। ফ্লাইটগুলো সরাসরিই হয়ে থাকে এবং কোথাও মধ্যবর্তী বিরতি থাকে না। ঢাকা থেকে গুয়াংজু এর সময় পার্থক্য ২ ঘণ্টা। তারমানে বাংলাদেশে যখন সময় দুপুর ১২ টা, গুয়াংজুতে তখন দুপুর ২ টা বাজবে।
ঢাকা থেকে গুয়াংজুর ফ্লাইট
ঢাকা থেকে গুয়াংজুতে বর্তমানে দৈনিক ২ টি ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউ এস বাংলা এয়ারলাইন্স ঢাকা থেকে গুয়াংজু ফ্লাইট পরিচালনা করা শুরু করেছে। এর আগে শুধু মাত্র চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্স এই রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করত। ক্রমবর্ধমান যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে ইউ এস বাংলা এই বছর, ২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল থেকে ঢাকা গুয়াংজু ফ্লাইট চালু করে। প্রাথমিক ভাবে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইটের ব্যাবস্থা করা হয়েছে। এজন্যে ইউ এস বাংলা তাদের একটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমান ব্যাবহার করছে। এতে ১৬৪ জন যাত্রী ভ্রমণ করতে পারবেন।
ঢাকা গুয়াংজু ফ্লাইটঃ এই রুটের দৈনিক ও সাপ্তাহিক ফ্লাইটের হিসাব
ঢাকা গুয়াংজু রুটে বর্তমানে প্রতিদিন ২ টি করে ফ্লাইট পরিচালিত হয়। যেসব এয়ারলাইন্স এই ফ্লাইটগুলো পরিচালনা করে তারা হলঃ
- চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্স
- ইউ এস বাংলা এয়ারলাইন্স
এর মধ্যে চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্স সপ্তাহের ৭ দিনে ৭ টি ফ্লাইট পরিচালনা করে। অন্যদিকে ইউ এস বাংলা এয়ারলাইন্স আপাতত সপ্তাহে তিন দিন ঢাকা গুয়াংজু রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে।
আপনাদের সুবিধার্থে এই দুটি এয়ারলাইন্সের দৈনিক ও সাপ্তাহিক ফ্লাইটের হিসাব ও ঢাকা থেকে ছাড়ার সময় নীচের চার্টে দেয়া হলঃ
বার | চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্স | ইউ এস বাংলা এয়ারলাইন্স |
---|---|---|
শনিবার | রাত ১২:৫০ মিনিট | রাত ০৯:৫০ মিনিট |
রবিবার | রাত ১২:৫০ মিনিট | ফ্লাইট নেই |
সোমবার | রাত ১২:৫০ মিনিট | ফ্লাইট নেই |
মঙ্গলবার | রাত ১২:৫০ মিনিট | রাত ০৯:৫০ মিনিট |
বুধবার | রাত ১২:৫০ মিনিট | ফ্লাইট নেই |
বৃহস্পতিবার | রাত ১২:৫০ মিনিট | রাত ০৯:৫০ মিনিট |
শুক্রবার | রাত ১২:৫০ মিনিট | ফ্লাইট নেই |
এছাড়া ওয়ান স্টপ বা কানেক্টিং ফ্লাইটেও যেতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে সময় বেশী লাগবে কারন কানেক্টিং ফ্লাইটগুলো ঢাকা এবং গুয়াংজুর মাঝে একটি বিরতি নিবে। সব মিলিয়ে সাধারণত গড়ে ৯ থেকে ১২ ঘণ্টা সময় লাগে। এ সমস্ত এয়ারলাইন্সের মধ্যে আছে মালিন্দো এয়ার, শ্রীলংকান এয়ারলাইন্স, চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্স, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স, ব্যাংকক এয়ার ইত্যাদি।

ঢাকা গুয়াংজু রুটের বিমান ভাড়া
ঢাকা থেকে গুয়াংজু রুটের ভাড়া বিভিন্নও এয়ারলাইন্সে বিভিন্ন রকম। ভাড়া বিভিন্ন পরিস্থিতিতে পরিবর্তনও হতে পারে। তবুও আপনাদের একটি সম্যক ধারণা দেবার জন্য নীচে ঢাকা গুয়াংজু রুটের ভাড়ার তালিকা দেয়া হল।
এয়ারলাইন্স | ঢাকা থেকে গুয়াংজু ভাড়া* | ফ্লাইট টাইপ |
---|---|---|
চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্স | ২৫,৭৭৩ টাকা | নন স্টপ / সরাসরি* |
ইউ এস বাংলা এয়ারলাইন্স | ৩২,২১০ টাকা | নন স্টপ / সরাসরি* |
শ্রীলংকান এয়ারলাইন্স | ২৫,৭৩৯ টাকা | ওয়ান স্টপ / কানেক্টিং |
এয়ার এশিয়া | ৩৪,৭৯৭ টাকা | ওয়ান স্টপ / কানেক্টিং |
চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্স | ৩০,৯৯৬ টাকা | ওয়ান স্টপ / কানেক্টিং |
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে বিমান ভাড়া সদা সর্বদা পরিবর্তনশীল। এটা পুরোপুরিভাবে বিমান সংস্থা দ্বারা নির্ধারিত। এই বিষয়ে ফ্লাইট এক্সপার্টে কোন ভাবেই দায়বদ্ধ না।

ঢাকা থেকে গুয়াংজু বিমান টিকিট কিভাবে করবেন
গুয়াংজু যেতে হলে আপনাকে প্রথমে আপনার পাসপোর্টে চীনের ভিসা লাগাতে হবে। এজন্যে আপনাকে ঢাকায় অবস্থিত চাইনিজ এমব্যাসিতে যোগাযোগ করতে হবে। তাদের ঠিকানাঃ
প্লট নম্বর ২ এবং ৪
এমব্যাসি রোড, ব্লক – ১, বারিধারা, ঢাকা।
ওয়েবসাইট ঠিকানাঃ http://bd.china-embassy.org/eng/
টিকিট করতে পারবেন আপনার পছন্দের বিমান সংস্থার অফিস অথবা ওয়েবসাইট থেকে। অগ্রিম টিকিট করাটা বেশী সুবিধাজনক। ভাড়ার ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় পেতে পারেন। এছাড়া পছন্দসই আসনও বেছে নিতে পারবেন। এজন্যে আপনাকে বিমান সংস্থার অফিসে দৌড়াদৌড়ি করার প্রয়োজন নেই। ঘরে বুসেই অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি থেকে টিকিট করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আরও কিছু এক্সট্রা ডিসকাউণ্ট পেলেও পেতে পারেন। বাংলাদেশের অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি গুলোর মধ্যে ফ্লাইট এক্সপার্ট বেশ স্বনামধন্য। এদের ওয়েবসাইট ঠিকানাঃ https://www.flightexpert.com/
আপনি ইচ্ছা করলে ঘরে বসেই টিকিট কেটে ফেলতে পারবেন। আপনার লাগবে শুধু একটি পিসি বা মোবাইল এবং ইন্টারনেট সংযোগ। এছাড়া মোবাইল অ্যাপ ও ব্যাবহার করতে পারবেন। (মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করুন এখান থেকে http://bit.ly/2IeONKU ) পেমেন্ট করার কয়েক মিনিটের ভিতর আপনার ই-মেইলে আপনার ই-টিকিট চলে আসবে। পেমেন্ট করতে পারবেন যেকোন ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিং ও বিকাশের মাধ্যমে। অফিসে এসে সরাসরি নগদেও পেমেন্ট করতে পারবেন।
এছাড়া এরা ভ্রমণ সম্পর্কিত যেকোন প্রশ্নের জন্য তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন এই নম্বরেঃ ০৯৬১৭-১১১-৮৮৮।
পরিশেষে, আপনার গুয়াংজু ভ্রমণ হোক আনন্দময় এবং নিরাপদ, এই প্রত্যাশা করছি।