ঢাকা বরিশাল রুটে বিমান ভ্রমণ সংক্রান্ত সব তথ্য
বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চলের অন্যতম প্রধান একটি জেলা শহর বরিশাল। প্রাচীন কালে এর নাম ছিল চন্দ্রদ্বিপ। কীর্তনখোলা নদীর তীরে এটি বরিশাল বিভাগের সবচাইতে বড় শহর এবং বিভাগীয় সদর দপ্তর। বরিশালে রয়েছে দেশের প্রাচীনতম এবং দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী বন্দর।
২০১৬ সালে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর পায়রা বন্দরের উদ্বোধন করা হয় যা বরিশালের গুরুত্ব আরও অনেক বেশী বাড়িয়ে দিয়েছে। এর ফলশ্রুতিতে দেশের বড় বড় বিনিয়োগকারীরা বরিশালে আরও বেশী বিনিয়োগ করা শুরু করেছেন। এজন্য বরিশাল এবং তার আশেপাশে গড়ে উঠছে আরও নতুন নতুন কলকারখানা, শিল্প ও ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান।
ঢাকা থেকে বরিশালের যোগাযোগ ব্যাবস্থা
সাম্প্রতিক উন্নয়নের ফলশ্রুতিতে ঢাকা থেকে বরিশালে যোগাযোগ আরও বেড়েছে। বলা যায় ৩-৪ বছর আগে যে পরিমান মানুষ ঢাকা থেকে বরিশাল যাতায়াত করতেন এখন করছেন তার দ্বিগুণ বা আরও বেশী মানুষ। এই রুটে যাওয়া আসার প্রধান মাধ্যম হল লঞ্চ এবং ফেরী।

প্রতিদিন বহু সংখ্যক লঞ্চ এবং ফেরী ঢাকা ও বরিশালের মধ্যে চলাচল করে। লঞ্চগুলো সাধারণত সন্ধ্যার পর/ রাতের বেলায় ঢাকা থেকে ছেড়ে যায় এবং পরদিন বরিশাল পৌছায়। কম বেশী ১০-১২ ঘণ্টা সময় লাগে এই যাত্রায়। তবে অনেক মানুষ যারা সাতার জানেন না বা জল পথে ভ্রমণ করতে ভয় পান তাঁদের জন্য লঞ্চ ভ্রমণ একটু ঝুকি পূর্ণ হতে পারে। বাংলাদেশের লঞ্চ ও ফেরী গুলো সাধারণত ধারণ ক্ষমতার বেশী মানুষ ও যান বাহন পরিবহন করে থাকে। তাই লঞ্চ দুর্ঘটনা এখানে নতুন কিছু না।
আপনি ইচ্ছা করলে বাসেও বরিশালে যেতে পারবেন। সড়ক পথে ঢাকা থেকে বরিশালের দূরত্ব ২৫০ কিলোমিটারের মত। বাস গুলো আরিচা হয়ে যাবে। এক্ষেত্রেও আপনাকে ফেরীতে পার হতে হবে। বাসের যাত্রাতে আপনার সময় লাগবে কম বেশী ৮-১০ ঘণ্টা। ঈদ, পুজা বা বছরের অন্যান্য ব্যাস্ত সময়গুলোতে এই সময় বেড়ে ১৫ ঘণ্টারও বেশী হয়ে থাকে।

আকাশ পথে ঢাকা থেকে বরিশাল যাত্রা
তবে আশার কথা এই যে দীর্ঘদিনের বিরতি ও অনিয়মের পর অবশেষে ঢাকা থেকে বরিশাল রুটের ফ্লাইট গুলো নতুন জীবন পেয়েছে। এজন্য বর্তমান সরকারকে ধন্যবাদ দিতেই হয়। তাঁদের যুগোপযোগী উদ্যোগের ফলেই বিমানবন্দর সংক্রান্ত সমস্যা গুলো দূর করা সম্ভব হয়েছে। যে কারণে বিমান সংস্থা গুলো আবার এই রুটে বিমান চলাচলের ব্যাপারে উৎসাহী হয়েছেন যা সাধারণ যাত্রীদের জন্য দারুন সুসংবাদ। নিয়মিত যাত্রীগণ, বিশেষ করে যাদের চাকুরি বা ব্যাবসার প্রয়োজনে ঢাকায় প্রায়শই যাতায়াত করতে হয়, তাঁদের ভোগান্তি অনেকটাই কমেছে, একথা বলা যেতে পারে। বিমান যোগে ঢাকা থেকে বরিশাল যেতে সময় লাগবে মাত্র ৪০ মিনিট বা তার কিছু কম/বেশি।
ঢাকা থেকে বরিশাল রুটের বিমান সমূহ
ঢাকা থেকে বরিশাল রুটে বর্তমানে ৩ টি বিমান সংস্থা নিয়মিত বিমান পরিচালনা করছে। এগুলো হলঃ
- বাংলাদেশ বিমান
- নভোএয়ার
- ইউ এস বাংলা এয়ারলাইন্স
তিনটি বিমান সংস্থা মিলে ঢাকা থেকে বরিশাল রুটে সপ্তাহে গড়ে ১৮ টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। যাত্রীদের মধ্যে এই তাঁদের এই সার্ভিস বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে এবং ফ্লাইট সংখ্যার তুলনায় যাত্রীদের চাহিদা বেশী দেখা যাচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিমান গুলোর প্রতিটি আসনই অগ্রিম বুক করে নিচ্ছেন যাত্রীরা।
বিমানগুলো ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে এবং বরিশাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

ঢাকা থেকে বরিশাল ফ্লাইট সংখ্যা
ঢাকা থেকে বরিশাল রুটে সপ্তাহে গড়ে ১৮ টি ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে নভোএয়ার ও ইউ এস বাংলা এয়ারলাইন্স সপ্তাহের ৭ দিনই ফ্লাইট পরিচালনা করছে। নীচে আমরা ঢাকা থেকে বরিশাল রুটের সাপ্তাহিক ফ্লাইটের একটি হিসাব দিচ্ছিঃ
বার | ফ্লাইট সংখ্যা |
---|---|
শনিবার | বাংলাদেশ বিমান – ফ্লাইট নেই নভোএয়ার– ১ টি ফ্লাইট ইউ এস বাংলা এয়ারলাইন্স– ১ টি ফ্লাইট |
রবিবার | বাংলাদেশ বিমান– ১ টি ফ্লাইট নভোএয়ার– ১ টি ফ্লাইট ইউ এস বাংলা এয়ারলাইন্স– ১ টি ফ্লাইট |
সোমবার | বাংলাদেশ বিমান- ফ্লাইট নেই নভোএয়ার– ১ টি ফ্লাইট ইউ এস বাংলা এয়ারলাইন্স– ১ টি ফ্লাইট |
মঙ্গলবার | বাংলাদেশ বিমান– ১ টি ফ্লাইট নভোএয়ার– ১ টি ফ্লাইট ইউ এস বাংলা এয়ারলাইন্স– ১ টি ফ্লাইট |
বুধবার | বাংলাদেশ বিমান- ফ্লাইট নেই নভোএয়ার– ১ টি ফ্লাইট ইউ এস বাংলা এয়ারলাইন্স– ১ টি ফ্লাইট |
বৃহস্পতিবার | বাংলাদেশ বিমান– ১ টি ফ্লাইট নভোএয়ার– ১ টি ফ্লাইট ইউ এস বাংলা এয়ারলাইন্স– ১ টি ফ্লাইট |
শুক্রবার | বাংলাদেশ বিমান– ১ টি ফ্লাইট নভোএয়ার– ১ টি ফ্লাইট ইউ এস বাংলা এয়ারলাইন্স– ১ টি ফ্লাইট |
ঢাকা বরিশাল রুটের বিমান ভাড়া
বিমানে ভ্রমণ করা একসময় শুধুমাত্র উচ্চবিত্তের সাধ্যের মধ্যেই ছিল। এর প্রধান কারন, সে সময় ফ্লাইট এবং যাত্রী সংখ্যা দুইই কম ছিল। যে কারণে বিমান সংস্থা গুলো ভাড়া বেশী রাখতে বাধ্য হত। কিন্তু এখন দিন বদলে গেছে! সচেতন মানসিকতার মানুষরা এখন সময় বাচাতে বেশী আগ্রহি। একারণে বিমান যাত্রির সংখ্যা এখন আগের চাইতে অনেক বেশী। বিমান সংস্থা গুলোও যাত্রীদের চাহিদা মেটানোর জন্য আরও বেশী ফ্লাইট চালু করছেন। এসব কারণে বিমান ভাড়াও চলে আসছে সাধ্যের মধ্যে।

নীচে আমরা ঢাকা থেকে বরিশাল রুটের বিমান ভাড়ার একটি তালিকা দেবার চেষ্টা করেছি। এখানে বলে রাখা ভাল যে বিমান ভাড়া পরিবর্তনশীল। ভ্রমণের তারিখ অনুযায়ী ভাড়া পরিবর্তিত হতে পারে। সেক্ষেত্রে ভাড়া কিছুটা কমে যায় অথবা বেড়ে যায়। তবে পার্থক্যটা সাধারণত খুব বেশী হয় না।
ঢাকা বরিশাল রুটও এর ব্যাতিক্রম না। আমরা চেষ্টা করেছি ঢাকা বরিশাল রুটের সবগুলো এয়ারলাইন্সের ভাড়ার একটি তুলনামূলক লিস্ট তৈরি করতে। এতে করে আমাদের সম্মানিত পাঠকরা ঢাকা বরিশাল রুটের বিমান ভাড়া সম্পর্কে বেশ ভালভাবে জানতে পারবেন।
এয়ারলাইন্স | সর্বনিম্ন ভাড়া (জনপ্রতি) | সর্বোচ্চ ভাড়া (জনপ্রতি) |
---|---|---|
বাংলাদেশ বিমান | ২,৫০০ টাকা (সুপার সেভার) | ৮,২০০ (ইকোনমি ফ্লেক্সিবল) |
নভোএয়ার | ২,৯৯৯ টাকা (স্পেশাল প্রোমো) | ৮,২০০ টাকা (ফ্লেক্সিবল) |
ইউ এস বাংলা এয়ারলাইন্স | ২,৬৯৯ টাকা (লিমিটেড অফার) | ৬,০০০ টাকা (রেগুলার) |
*এখানে উল্লেখ্য এই যে, এই ভাড়া গুলো সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থার ওয়েবসাইট থেকে নেয়া হয়েছে। অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি থেকে টিকিট নিলে ভাড়া এর থেকে কিছু কম আসবে। আপনার ফ্লাইটের ভাড়া চেক করতে এই সাইট টি ব্রাউজ করুনঃ https://www.flightexpert.com/
** তালিকাটি সময়ের সাথে পরিবর্তিত হতে পারে এবং এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। আমরা তালিকাটি তৈরি করেছি ঢাকা বরিশাল রুটের বিমান ভাড়া সম্পর্কে আমাদের পাঠকদের একটি সম্যক ধারানা দেবার জন্য।

কিভাবে ঢাকা বরিশাল বিমান টিকিট করবেন
আভ্যান্তরিন বিমান ভ্রমণের জন্য পাসপোর্টের প্রয়োজন হবে না। তাই বিমান ভ্রমণের আলাদা কোন ঝামেলা নেই বললেই চলে। নিরাপত্তার খাতিরে শুধু আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রটি হলেই চলবে।
আপনার পছন্দের বিমান অফিস থেকে ঢাকা টু বরিশাল বিমান টিকিট করে নিতে পারবেন। ওয়েবসাইটগুলো থেকেও টিকিট করতে পারেন। যারা ডিসকাউন্ট পছন্দ করেন, তারা ট্রাভেল এজেন্সি থেকে টিকিট নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে কিছু ডিসকাউন্টও পেয়ে যেতে পারেন। বাংলাদেশের অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি গুলোর মধ্যে ফ্লাইট এক্সপার্ট বেশ স্বনামধন্য। এখান থেকে যেকোন বিমানের টিকিট করে নিতে পারবেন ঘরে বসেই।
ওয়েবসাইট ঠিকানাঃ https://www.flightexpert.com/
এছাড়া এরা ভ্রমণ সম্পর্কিত যেকোন প্রশ্নের জন্যও তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন এই নম্বরেঃ ০৯৬১৭-১১১-৮৮৮
লাগেজ সংক্রান্ত তথ্য
নিয়ম অনুযায়ী ইকোনমি যাত্রীরা প্রত্যেকে ২০ কেজি পরিমান চেক কৃত মালামাল বহন করতে পারবেন। তাছাড়া কেবিন লাগেজ হিসেবে ৭ কেজি মাল বহন করা যাবে। বিজনেস ক্লাসের যাত্রীরা ৩০ কেজি চেক কৃত মালামাল এবং ৭ কেজি কেবিন লাগেজ বহন করতে পারবেন। এর চাইতে বেশী লাগেজ পরিবহন করতে চাইলে অতিরিক্ত ফি দিতে হবে। এই ফি সম্পর্কে জানার জন্যে আপনার নির্দিষ্ট এয়ারলাইন্সের সাথে যোগাযোগ করুন। বিমানে মালামাল পরিবহনের সিমাবদ্ধতা ও নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে আরও তথ্য পেতে চাইলে আমাদের এই ব্লগ পোস্টটি পড়ে দেখতে পারেনঃ https://www.flightexpert.com/blog/baggage-rules-for-air-travelers